জারের সঙ্গে নিজেকে তুলনা পুতিনের
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিজেকে ১৮ শতকের রুশ জার পিটার দ্য গ্রেটের সঙ্গে তুলনা করেছেন। রুশ ভূখণ্ড ফিরে পেতে জার যা করেছিলেন, তার সঙ্গে ইউক্রেনের কর্মকাণ্ডকে তুলনা করেছেন তিনি। পুতিন গত বৃহস্পতিবার জারকে উৎসর্গ করা এক প্রদর্শনী পরিদর্শন শেষে ওই মন্তব্য করেন। পিটার দ্য গ্রেট সুইডেন হারিয়ে বাল্টিক সাগর অঞ্চলে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পুতিনও বাল্টিক সাগর অঞ্চলে রাশিয়ার হারানো সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধারের সংকল্প ঘোষণা করেছেন।
প্রদর্শনীতে আসা তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে পুতিন বলেন, ‘পিটার দ্য গ্রেট প্রায় ২১ বছর ধরে উত্তরাঞ্চলের মহান যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কেউ কেউ ভাবতে পারেন, তিনি সুইডেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিলেন এবং পরবর্তী সময়ে তিনি সুইডেনের কাছ থেকে কিছু ছিনিয়ে আনেন। তবে বাস্তবে তিনি কিছু নেননি; বরং যা রাশিয়ার ছিল তার কিছু তিনি ফিরিয়ে এনেছেন।’
ইউক্রেনে আক্রমণকে পিটার দ্য গ্রেটের অভিযানের সঙ্গে তুলনা করে পুতিন আরও বলেন, ‘প্রকৃত অর্থে অনেক কিছু রাশিয়ায় ফিরিয়ে আনা এবং দেশকে শক্তিশালী করার দায়িত্ব রয়েছে। আমরা যে মৌলিক মূল্যবোধ ধারণ করি, সেটি নিয়ে যদি আমরা এগোই, তাহলে আগামী দিনে মুখোমুখি হওয়া সব সমস্যা নিশ্চিতভাবেই সমাধান করতে পারব।’
অনুষ্ঠানে দেওয়া এক ভাষণে পুতিন পিটার দ্য গ্রেট সুইডেনের বিপক্ষে যুদ্ধ জিতে বাল্টিক সাগর অঞ্চলে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, তাঁর দেশের সেই অঞ্চলগুলো ‘ফিরিয়ে নেওয়া’ উচিত এবং সেগুলো ‘রক্ষা’ করা উচিত। যখন পিটার দ্য গ্রেট সেন্ট পিটার্সবার্গ স্থাপন করেন এবং সেটিকে রাশিয়ার রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন, তখন ইউরোপের কোনো দেশই এই অঞ্চলকে রাশিয়ার বলে স্বীকৃতি দেয়নি। সবাই সেটিকে সুইডেনের এলাকা বলেই বিবেচনা করত। কিন্তু স্মরণাতীতকাল থেকেই ওই অঞ্চলে ফিনো-ইউগ্রিক জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি স্লাভদের বসবাস।
বর্তমান ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়টি উদাহরণ হিসেবে টেনে পুতিন বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব হলো, সেগুলো পুনরুদ্ধার ও রক্ষা করা।’
ব্রিটিশ নাগরিকদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়ায় উদ্বেগ
এদিকে পূর্ব ইউক্রেনের রাশিয়া-সমর্থিত স্বঘোষিত দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিকে (ডিপিআর) তিন বিদেশি যোদ্ধাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ায় জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ভাড়াটে সৈন্য হিসেবে অংশ নেওয়ার অভিযোগে বৃহস্পতিবার দুই ব্রিটিশ এবং মরক্কোর এক নাগরিককে মৃত্যুদণ্ড দেন দোনেৎস্কের একটি আদালত। এর আগে ওই তিনজন রুশ সেনাদের হাতে ধরা পড়েছিলেন।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিকে (ডিপিআর) দুই ব্রিটিশ নাগরিক এবং মরক্কোর একজন নাগরিক অপরাধী সাব্যস্ত হয়েছেন। ডিপিআরের আইন অনুযায়ী তাঁদের বিচার হচ্ছে। কারণ, সেখানকার মাটিতেই তাঁরা অপরাধ করেছেন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পূর্ব ইউক্রেনের রুশপন্থী বিদ্রোহীদের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে গত ফেব্রুয়ারি মাসেই স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছেন। ২০১৪ সাল থেকে ডিপিআরের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা স্বাধীনতার জন্য লড়াই শুরু করেন।
যুক্তরাজ্য ও জার্মানি এই রায়ের নিন্দা করেছে। বার্লিন বলেছে, এই বিচার মস্কোর মানবিক আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক নীতির প্রতি সম্পূর্ণ অবজ্ঞার বিষয়টি তুলে ধরেছে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের একজন মুখপাত্র বলেন, ডিপিআরে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই ব্রিটিশ নাগরিকের বিষয়ে রাশিয়ার চেয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে কথা বলাকে যুক্তরাজ্য অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) মুখপাত্র রাভিনা সামদাসানি বলেন, ২০১৫ সাল থেকে আমরা লক্ষ্য করেছি, ডিপিআর ও লুহানস্কের মতো স্বঘোষিত প্রজাতন্ত্রগুলোতে তথাকথিত বিচার বিভাগ ন্যায্য বিচারের নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। যুদ্ধবন্দীদের বিরুদ্ধে এ ধরনের বিচার যুদ্ধাপরাধের শামিল।
Post a Comment