‘সাগরে এবার ইলিশের চাপ বেশি, সাইজও বড়’

 জাল ফালাইলেই ইলিশ ধরা পড়ছে। কোনো জাইল্যাই সাগর থেইক্যা খালি হাতে ফেরছে না। এবার সাগরে ইলিশের চাপ বেশিই মনে হইতেছে। ইলিশের সাইজও বড়।’




সাগর থেকে ফিরে কথাগুলো বলছিলেন আফসার মাঝি। তাঁদের সঙ্গে শনিবার বিকেলে কথা হয় কলাপাড়ার মহিপুর মৎস্য বন্দরে। আফসার মাঝিসহ ২৪ জেলে গভীর সাগরে গিয়েছিলেন।


আফসার মাঝি বলছিলেন, গভীর সাগরে গিয়ে এক টানে দুই হাজার ইলিশ ওঠে তাঁর জালে। এক কেজি থেকে আড়াই কেজি পর্যন্ত ওজনের ইলিশ বেশি ধরা পড়েছে তাঁর জালে। ৪০ মণ ইলিশ মাছ পেয়েছেন। বিক্রি করেছেন ১৫ লাখ ৬০ হাজার টাকায়।


তিনি বলেন, গভীর সাগরে (১০০ থেকে ১৫০ হাত গভীর) প্রচুর ইলিশ রয়েছে। বেশি ইলিশ ধরা পড়ায় বাজারে ইলিশের দামও কমে গেছে বলে জানান তিনি।



পটুয়াখালীর উপকূলের কুয়াকাটা, মহিপুর, আলীপুর, খালগোড়া, ঢোস, চাড়িপাড়া, গঙ্গামতী, বুড়োজালিয়া, দেবপুরের আড়তগুলোতে ইলিশ মাছ কেনাবেচা চলছে দেদারসে। ৬৫ দিনের অবরোধ উঠে যাওয়ার পর এসব এলাকার বাজারগুলোতে ইলিশের সরবরাহ বেড়েছে। তুলনামূলক দামও কম। কলাপাড়া পৌর শহরের লঞ্চঘাট এলাকার মাছবাজার, এতিমখানা মোড়, নিশানবাড়িয়া ব্রিজ-সংলগ্ন মাছের সন্ধ্যা বাজারেও ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে ক্রেতার ভিড়ও ছিল যথেষ্ট।


মৎস্য আড়তদারদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, এবার ৪০০ থেকে ৭০০ গ্রাম পর্যন্ত ইলিশ ২৪ থেকে ২৫ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। ৬৫ দিনের অবরোধের আগে এর দর ছিল ৩২ থেকে ৩৩ হাজার টাকা মণ। এ বছর দেড়-দুই কেজি, এমনকি আড়াই কেজি পর্যন্ত ওজনের ইলিশও ধরা পড়ছে। এখন বাজারে তা ৩৯ থেকে ৪০ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। অবরোধের আগে তা ছিল ৪৫-৫০ হাজার টাকা মণ। 


পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজাহারুল ইসলাম বলেন, ২০১৯-২০ সালে জেলায় ইলিশ ধরা পড়েছে ৫১ হাজার ৮৩৯ মেট্রিক টন, ২০২০-২১ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৭০ হাজার ২ মেট্রিক টন। তবে ২০২১-২২ সালে কমেছে ৫৭ হাজার ৯৬৬ মেট্রিক টন। তখন আবহাওয়ার কারণে গভীর সাগরে জেলেরা যেতে না পারায় ইলিশ কম ধরা পড়ে। আশা করছেন চলতি বছর জেলেরা আশানুরূপ ইলিশ পাবেন।


ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির কারণ


২৩ জুলাই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর থেকেই জেলেরা ছুটেছেন সাগরে। ইলিশও পাচ্ছেন প্রচুর। মৎস্য খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এবার ইলিশের উৎপাদন অপেক্ষাকৃত বেশি। এর কারণ কী?


বরিশালের মৎস্য অধিদপ্তরের সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক ও ইলিশ গবেষক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে এবার বেশ সফল হয়েছে। সাগরমোহনায় জেলেরা মাছ ধরা থেকে বিরত ছিলেন। এ কারণে অসংখ্য মা ইলিশ ও প্রাপ্তবয়স্ক ইলিশ ধরা পড়া থেকে বেঁচে গেছে। এসব ইলিশই সাগরে ফিরে গিয়ে আকার-আকৃতি ও ওজনে বৃদ্ধি পেয়েছে।


মো. কামরুল ইসলাম জানান, মৎস্য বিভাগের অবৈধ জাল উদ্ধারে বিশেষ অভিযান পরিচালনায় জেলেরা আগের তুলনায় বৈধ ও বড় ফাঁসের ভাসান (সাড়ে ৬ সেন্টিমিটার) জালের ব্যবহার বাড়িয়েছেন। তাই ছোট ও মাঝারি ইলিশ ধরা পড়া থেকে বেঁচে যাচ্ছে, যা পরে বড় হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীর বিস্তৃত অংশে অভয়াশ্রম থাকায় মার্চ-এপ্রিল দুই মাসে মৎস্য বিভাগ ও প্রশাসন, পুলিশ, কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশের সমন্বিত অভিযানের কারণে অসংখ্য ইলিশ আহরণ থেকে বেঁচে গিয়ে আকারে বড় হতে পেরেছে।

কোন মন্তব্য নেই

মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷

Blogger দ্বারা পরিচালিত.